দর্শনীয় চক চান্দিরার ৩৬৫ পুকুর
অপার সৌন্দর্যের এক অন্যতম স্থান হলো নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের চক চান্দিরা গ্রামের ৩৬৫ পুকুর। বিশাল ঘুকশি বিলের পাশে সারি সারি ছোট বড় অসংখ্য পুকুর, পুকুরের পাড় ঘেঁষে মনোরম সবুজ বনায়ন যে কোন ভ্রমণ পিপাসু ব্যক্তিকে মুগ্ধ করবে।
কথা বলছি নওগাঁ জেলার অন্তর্গত কিছুটা আড়ালে থাকা এক সম্ভাবনাময় দর্শনীয় স্থান চক চান্দিরার ৩৬৫ পুকুর নিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনায় পর্যটন খাতের উন্নয়ন এখন দিবালোকের স্পষ্ট। তাই বিদেশ ভ্রমণের জন্য ই পাসপোর্ট কিংবা ভিসা বা দেশে অভ্যন্তরে ভ্রমণের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা বা নিরাপত্তা যেটার কথাই বলেন সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ছাপ দৃশ্যমান। যার ফলশ্রুতিতে একসময়ে বন জঙ্গলে নিচে চাপা পড়া ভূতুড়ে চক চান্দিরার ৩৬৫ পুকুর এখন তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছে।
ঘাস আগাছায় ভরে থাকা পুকুর গুলোকে পরিষ্কার ও সংস্কর করে করা হয়েছে দৃশ্যমান এবং প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পুকুরের পাড় ঘেঁষা এলাকার গুলোতে বনায়নের মধ্যমে করা হয়েছে সবুজায়ন। যার সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। আপনি যদি নওগাঁ জেলার কিংবা তার পার্শ্ববর্তী জেলা গুলোর বাসিন্দা হোন কিংবা আপনি যদি বাংলাদেশকে এক্সপ্লোর করতে চান তাহলে নওগাঁর চক চান্দিরার ৩৬৫ পুকুর আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখার মত একটি উল্লেযোগ্য স্থান হতে পারে।
প্রকৃতি ঘেরা ছায়া সুনিবিড় চক চান্দিরার ৩৬৫ পুকুরের সঠিক ইতিহাস এখনো জানা যায়নি বা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে সেই এলাকায় প্রচলিত লোককথা অনুসারে, অষ্টম শতাব্দীর প্রাচীন পাল বংশের রাজা চান্দিলালের রাজ্য সেখানে অবস্থিত ছিল। চান্দিলাল ঠিকঠাক মতই সুখে শান্তিতে তার রাজ্য পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু শান্তির রাজ্যে একদিন রানী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং দিন যত গড়াতে থাকে রানীর শারীরিক অবস্থার তত অবনতি হতে থাকে। রাজ্যের সকল বৈদ্য, হেকিম, কবিরাজ মিলেও রানীকে সুস্থ করে তুলতে পারছিলেন না। তখন বৈদ্য কবিরাজ গণ রাজাকে রানীর সুস্থতার জন্য এক অদ্ভুত চিকিৎসার কথা বলেন।
তারা রাজাকে ৩৬৫ টি পুকুর খনন করতে বলেন এবং প্রতিদিন একটি করে পুকুরের রানীর গোসলের ব্যবস্থা করতে বলেন। এভাবে ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ পুকুরে গোসলের মধ্যমেই রানী সুস্থ হয়ে উঠবেন। রানীর প্রতি রাজা চান্দিলালের ছিল অগাধ ভালোবাসা। যার কারণে তিনি রানীর সুস্থতার জন্য বৈদ কবিরাজদের কথা মেনে নেন এবং ৩৬৫ টি পুকুর খনন করেন। এবং প্রতিটি পুকুরের তিন থেকে চারটি করে শান বাধা ঘাট নির্মাণ করেন। আর এই ভাবেই রানী ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ পুকুরে গোসল করে আরোগ্য লাভ করেন। তবে এই লোককথার বা অষ্টম শতাব্দীর পাল বংশের রাজা চান্দিলালের রাজ্য কোন কিছুরই ঐতিহাসিক কোন সত্যতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এখানকার একটি পুকুরের নাম দুইসতীনা পুকুর। আর এই পুকুর নিয়েও একটি লোককথা প্রচলিত রয়েছে তা হল রাজা তার দুই স্ত্রীর গোসলের জন্য একটি একটি পুকুর খনন করেন। কিন্তু দুই স্ত্রীর গোসলে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে করণে রাজা পুকুর দুটিকে পার্টিশন দিয়ে আলাদা করে দেন। এখানে সতীন বলছে মূলত রাজার দুই স্ত্রীকে বোঝানো হয়েছে যার কারনে পুকুরটির নাম দুইসতীনা পুকুর৷ তবে এই লোককথারও কোন ঐতিহাসিক কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
এই এলাকার প্রবীণ লোকদের মূখে এই ৩৬৫ পুকুরের মধ্যে একটি পুকুর নিয়ে আরও একটি অদ্ভুত কাহিনী শোনা যায়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী এখানকার কোন একটি পুকুরে একটি পাথর ভাসতো। পাথরটি নিজে নিজেই চলাফেরা করত। পুকুরের পাড়ে পাথরটি রেখে দিলে পরদিন আবারও সেই পাথরটিকে পানিতে ভাসতে দেখা যেত। নিজে নিজে পাথরটি চলাফেরা করত বলে সেই পুকুরের নাম করণ করা হয়েছিলো পাথর পকড়া। কিন্তু এখন আর ওই পাথরটি ভাসে না বা চলাচল করে না। স্থানীয় ঐ সকল প্রবীণ ব্যক্তিদের ধারণা পাথরটি মারা গেছে।
প্রাচীন এই লোককথার গুলো সত্য মিথ্যা যাই হোক না কেন কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো রয়ে গেছে লোককথার সেই ৩৬৫ টি পুকুর। বর্তমানে যার ঐতিহাসিক গুরুত্বের চেয়ে পর্যটন গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই আপনি যদি এই লোককথার রাজ্য থেকে ঘুরে আসতে চান তাহলে সর্ব প্রথম আপনাকে নওগাঁ জেলা শহরে আসতে হবে তারপর সেখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ধামইরহাট উপজেলায় আসতে। এতদূর পর্যন্ত আপনি বাস, মাইক্রো, প্রাইভেট কার বাইক যে কোন ভাবেই আসতে পারবেন।
তারপর ধামইরহাট উপজেলা থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঘুকশি নদীর কোলঘেষা ইসবপুর ইউনিয়নের চক চান্দিরা গ্রামের ৩৬৫ পুকুর। ধামইরহাট উপজেলা থেকে এখান পর্যন্ত আসতে আপনাকে বাইক অথবা স্থানীয় যান অর্থাৎ ভ্যান বা অটোরিক্সা ব্যবহার করতে হবে। তবে নওগাঁ জেলা শহর থেকে বদলগাছী উপজেলা হয়ে উত্তরে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত চক চান্দিরা ৩৬৫ পুকুর।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS