নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত সোমপুর বিহার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সোমপুর বিহার ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক বুকানন হামিলটন যখন পূর্ব ভারতে জরিপ কাজ পরিচালনা করেন (১৮০৭-১৮১২) তখন তিনি পাহাড়পুরের এই সূতপকে বৌদ্ধ বিহার বলে অনুমান করেন। ১৯২৩ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যমত্ম এর খনন কাজ চলে। খনন কালে মাটির একটি সিল থেকে জানা যায় যে, এটি সোমপুর বিহার। পাল রাজবংশের রাজা ধর্মপাল (৭৮১-৮২১) অষ্টম শতকের শেষ দিকে এ বিহার নির্মাণ করেন। সোমপুর বিহার এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম বিহার। এর দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট। মূল ভবনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য ১৭৭টি কক্ষ ছিল। ৮০০ জন ভিক্ষুর বাসপোযোগী ছিল। এ বিহারে ১২৫নং কক্ষে মাটির পাত্রে খলিফা হারুন-অর-রশিদের শাসনামলের রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া যায়। কোন সাধক বা ধর্ম প্রচারক মুদ্রাগুলি এখানে এনেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। পিরামিড আকৃতির এ মঠের উচ্চতা ৭০ ফুট। ১টি শূন্যগর্ভ চতুস্কোণ কক্ষকে কেন্দ্র করে এর অন্যান্য সংযোজনীসমূহ গড়ে ওঠেছে। সমগ্র বিহারটি প্রাচীর বেষ্টিত। এর প্রবেশ পথ এবং মূল ভবনে ওঠার সিঁড়ি ছিল উত্তর দিকে। সোমপুর বিহারে বাস করতেন মহাপন্ডিতাচার্য বোধিভদ্র। আচার্য অতীশ দীপঙ্কর কিছু কাল এই বিহারে বাস করেন। তাঁর গুরু রত্নাকর শামিত্ম সোমপুর বিহারের মহাস্থবির ছিলেন। সোমপুর বিহারে অবস্থান করতেন প্রাচীন চর্যাগীতিকার কাহ্নপা ও তাঁর গুরু জলন্দরী পা ওরওফ হাড়ি পা।
পাহাড়পুর নওগাঁ জেলা এবং বদলগাছী থানার অধীনস্থ পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ন প্রত্নস্থল। পাকা সড়কের মাধ্যমে গ্রামটির নিকটস্থ রেল স্টেশন জামালগঞ্জ, জেলা শহর নওগাঁ এবং জয়পুরহাট শহরের সংগে যোগাযোগ রক্ষিত হচ্ছে। এ প্রত্নস্থল উত্তরবঙ্গের পাবনভূমিতে অবস্থিত। বিস্তীর্ণ একটানা সমভূমির মাঝে এক সুউচ্চ (পার্শ্ববর্তী ভূমি থেকে প্রায় ২৪ মিটার উঁচু) প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ স্বভাবতই একে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। স্থানীয়ভাবে পাহাড় নামে পরিচিত লাভকারী এ ধ্বংসাবশেষের অবস্থান থেকে পাহাড়পুর নামের উৎপত্তি হয়েছে। পূর্বভারতে জরিপ কাজ পরিচালনাকালে ১৮০৭ থেকে ১৮১২ সালের মধ্যে বুকানন হ্যামিল্টন সর্ব প্রথম প্রত্নস্থলটি পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ওয়েস্টম্যাকট পাহাড়পুর পরিভ্রমণে আসেন। স্যার আলেকজান্ডার ১৮৭৯ সালে এ স্থা্ান পরিদর্শন করেন। তিনি এ ঢিভিতে ব্যাপক আকারে খনন করতে চেয়েছিলেন। কিন্ত এ জমির মালিক বলিহারের জমিদার কর্তৃক তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। ফলে বিহার এলাকায় সামান্য অংশে এবং কেন্দ্রিয় ঢিভির শীর্ষভাবে সীমিত আকারে খননের কাজ চালিয়েই তাঁকে সন্তোষ্ট করতে হয়। শেষোক্ত এলাকায় তিনি চার পাশে উদ্গত অংশযুক্ত ২২ ফুট বর্গাকার একটি ইমারত আবিষ্কার করেন। প্রত্নস্থলটি ১৯০৯ সালে পুরাকীর্তি আইনের আত্ততায় ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ কর্তৃক ১৯১৯ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়। (ভূমি নকশা, পাহাড়পুর)।
পাহাড়পুরযাওয়ার ব্যবস্থা:
নওগাঁ বালুডাংগা বাস টার্মিনাল হতে সরাসরি বাসযোগে ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে যাওয়া যায় |আনুমানিক দূরত্ব আনুমানিক ৩২ কিঃমিঃ বাসভাড়া- ৩০- ৪০ টাকা
থাকার ব্যবস্থা-জনসাধারণের জন্য পাহাড়পুরে থাকার কোন ব্যবস্থানেই । দিনে যেয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে অথবা উপজেলা সদর/জেলা সদরে থাকা যাবে; তবে ভি আই পি দের থাকার জন্য নিকটে রেস্টহাউস আছে ।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS